টিপস

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই| খতিয়ান বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই। সেইসাথে খতিয়ান বের করার নিয়ম। অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। তাই এই পোস্টে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব সুতরাং যারা। অনলাইনে জমির খতিয়ান পর্চা সম্পর্কে জানতে চায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে এসেছেন তারা সঠিক ওয়েবসাইটে এসেছেন। এখানে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা আশা করি এখান থেকে আপনি জমির মালিকানা যাচাই প্রক্রিয়াটির সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে যাচাইকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো জেনে রাখলে পরবর্তী সময়ে আপনি খুব সহজেই অনলাইন থেকে জমির মালিকানা খতিয়ান বের করতে পারবেন। এছাড়া সাধারণভাবে অনেকেই এখন পর্যন্ত জানেন না যে জমির খতিয়ান কিবা পর্চা কি । এছাড়াও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে তারা সাধারণভাবে এই সকল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানতে পারবেন।

অর্থাৎ জমিসংক্রান্ত অনলাইনে যে সকল তথ্য জানার উপায় রয়েছে সেই উপায় গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এখান থেকে। বাংলাদেশ ভূমি সংক্রান্ত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এই বিষয়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে আমরা অনেকেই এই সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারি আবার অনেকেই পারিনা। সেবা না পাওয়ার কারন আমরা এই সেবাগুলো সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানিনা। সুতরাং যারা এ বিষয়ে জানেন কিন্তু কিভাবে সেবা গ্রহণ করতে হবে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না তারা পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন আমরা আশা করি এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে জমির যে সকল সেবা প্রদান করা হয় সেই সকল সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

জমির খতিয়ান বা পর্চা কি?

খতিয়ান বা পর্চা একই জিনিস। জমির মালিকানা প্রমাণের সরকারি যে দলিল তাকে খতিয়ান বলে। বিভিন্ন এলাকায় এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
আইনিভাবে খতিয়ানের পরিচয়- আইনিভাবে বলতে গেলে বলা যায় সরকারীভাবে জমি জরিপ করার সময় জরিপের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে  চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬২ (সংশোধিত) তে ভুমির মালিকানা/ দাগের বর্ণনাসহ যে নথিচিত্র প্রকাশ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

খতিয়ানে কি কি উল্লেখ থাকে?

জমির খতিয়ানে মালিকানা তথ্য সহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেক থাকে। যেমন-
  • প্রজা বা জমি দখলদারের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম ও প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণীভুক্ত।
  • প্রজা বা দখলদার কর্তক জমির অবস্থান, পরিমান ও সীমানা।
  • জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
  • এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
  • খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমান ও ২৮,২৯,৩০ বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা। গরু চরণভুমি, বনভুমি ও মৎস খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
  • খাজনার যে পদ্ধতিতে নির্ধারিত করা হয়েছে তার বিবরণ।
  • ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধারিত এবং ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
  • খাজনা বৃদ্ধিক্রম থাকলে তার বিবরণ।
  • ইজারাকৃত জমির ক্ষেত্রে জমির মালিকের অধিকার ও কর্তব্য।
  • প্রজাস্বত্ব বিশেষ শর্ত ও তার পরিনতি।
  • পথ চলার অধিকার ও জমি সংলগ্ন অন্যান্য অধিকার।
  • নিজস্ব জমি হলে তার বিবরণ।
  • খতিয়ান নং, মৌজা নং, জেএল নং, দাগ নং, বাট্রা নং, এরিয়া নং ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।

মাঠ পর্চা কি বা মাঠ পর্চা কাকে বলে?

জমি জরিপ করার সময় জমির মালিকদেরকে একটি খসড়া খতিয়ান দেওয়া হয় তাকে মাঠ পর্চা বলে। এটাতে কোন প্রকার ভুল থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সহজেই সংশোধন করে নেওয়া যায়।
সুতরাং বলাযায় চুড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশের আগে জমির মালিকরা যে খসড়া খতিয়ান ব্যবহার করে তাকে মাঠ পর্চা বলে।

খতিয়ানের প্রকারভেদ

আমাদের দেশে এ যাবৎ তিনটি জরিপ হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী জমির খতিয়ান বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-
  1. সিএস খতিয়ান
  2. এসএ খতিয়ান
  3. আরএস খতিয়ান
  4. বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ
এখানে উল্লেখ্য যে, বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ আর এস খতিয়ানের অন্তভুক্ত সেই হিসাবে খতিয়ান তিন প্রকার।

সিএস খতিয়ান। (Cadastral Survey)

এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যে জরিপ হয় সেটাই হচ্ছে সিএস খতিয়ান (Cadastral Survey)। এই জরিপ ১৮৮৭ সালে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে শেষ হয়।
এই জরিপ কক্সবাজারের রামুতে শুরু হয় এবং দিনাজপুরে শেষ হয়। জরিপ চলাকালে সিলেট আসাম প্রদেশ এর সাথে সংযুক্ত এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জমিদারি প্রথার সাথে বাঙ্গালীদের বিরোধ থাকায় এই দুটি অঞ্চল সিএস জরিপের আওতায় আনা হয় নাই।
সুতরাং সিএস জরিপ হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জরিপ এবং এর খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলা হয়।
এই খতিয়ান উপর থেকে নিচ লম্বালম্বিভাবে হয়। একদম উপরে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬৩ লিখা থাকে।

এসএ খতিয়ান । (State Acquisition Survey)

১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। আইন পাশের পর ততকালিন সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ সাবস্ত করেন।
এই সময় সরকারি আমিনগণ সরেজমিন অর্থাৎ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে খতিয়ান তৈরি করেন। এটাকে এসএ খতিয়ান বলে। কোন কোন অঞ্চলে এ খতিয়ানকে টেবিল খতিয়ান বা ৬২ খতিয়ান বলা হয়।
সরেজমিন না গিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এ খতিয়ানে অনেক ধরণের অসমতা দেখা দেয়।
এ খতিয়ান সাধারণত এক পৃষ্ঠায় হয়ে থাকে এক কখন প্রিন্ট হয় না অর্থাৎ হাতে লেখা খতিয়ান হচ্ছে এসএ খতিয়ান।

 আরএস খতিয়ান। (Revisional Survey)

সিএস খতিয়ান সম্পন্ন হওয়ার ৫০ বছর অতিক্রম করে আরিএস জরিপ শুরু হয়। আগের খতিয়ানের ভুল সংশোধন করে এতটাই স্বচ্ছ করা হয় যে, মালিকানা, দখলদার বিরোধ কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে এটির উপর নির্ভর করতে হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এর খতিয়ানকে বাংলাদেশ খতিয়ানও বলা হয়।
আরএস খতিয়ান সিএস খতিয়ানের মত লম্বালম্বি দাগ টানা থাকে তবে এটি এক পৃষ্ঠায় হয়। ফরমের একদম উপরে হাতের ডান পাশে ‘রেসার্তে নং’ লেখা থাকে।

বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ। (City Survey)

বাংলাদেশে সর্বশেষ যে জরিপ (1998-1999 সালে) অনুষ্ঠিত হয় যেটার কাজ এখন চলমান রয়েছে। টাকা অঞ্চলে এটা মহানগর জরিপ হিসাবে পরিচিত লাভ করে।
বি এস খতিয়ানে ৯ টা কলাম থাকে এবং জমির ধরণ কি তা উল্লেখ থাকে। যেমন- চাষের জমি, পুকুর ইত্যাদি।

জমির মালিকানা বের করার প্রয়োজন হয় কেন?

জমি ক্রয় করার আগে ক্রয়কারিকে অবশ্যই মালিকানা যাচাই করে নিতে হয়। কেননা বাংলাদেশে প্রতারকের অভাব নেই। নকল মালিক সেজেও জমি বিক্রয় করার প্রতারণা করতে পারে অনেকেই।
এছাড়াও জমি জমা নিয়ে বিরোধ মিমাংসা করার ক্ষেত্রেও জমির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হয়।
ওয়ারিশদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বন্টন করার আগেও মৃত ব্যক্তির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হতে পারে। কেননা অন্য কারো জমি দাপুটে ভোগদখল করার নজির আমাদের দেশে আছে।

জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম

বর্তমানে আপনি দুইভাবে জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন। যেমন – এক. কোন খতিয়ান সম্পর্কে যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে খতিয়ানটি নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে খতিয়ানের ভলিয়াম দেখুন।
আপনার খতিয়ান ভলিয়মের সাথে মিল থাকলে খতিয়ানটি সঠিক নচেৎ জালিয়াতি করা হয়েছে।
দুই. অনলাইনের মাধ্যমেও খতিয়ানটি যাচাই করে নিতে পারেন নিজে নিজেই। আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেটে ইন্টারনেট সংযোগ করে অনলাইনে জমির কাগজ দেখতে পারেন।

খতিয়ান বের করার নিয়ম বা কিভাবে জমির খতিয়ান উঠাবেন?

খতিয়ান উঠানো বা বর্তমানে খতিয়ান বের করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতি অপরটি হচ্ছে মেনুয়াল পদ্ধতি।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে আপনি দু প্রকার খতিয়ান উঠাতে পারবেন। খতিয়ানের অনলাইন কপি এবং ডাক যোগে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন।
জমির খতিয়ান উঠানোর মেনুয়াল পদ্ধতি হচ্ছে- খতিয়ান নাম্বার বা জমির দাগ নাম্বার নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে খতিয়ান তোলা।
সেটেলমেন্ট থেকে খতিয়ান উঠাতে ১০০ (একশত) টাকা খরচ হয়। আর অনলাইনে খতিয়ান উঠাতে ৫০ টাকা খরচ লাগবে।

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই ও খতিয়ান বের করার নিয়ম

ডিজিটাল এই যুগে ভূমি সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কোথাও না গিয়ে নিজে নিজে বাসায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই করাসহ যে কোন খতিয়ান বের করা যায় খুব সহজেই।
ল্যাপটপ/কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ মোবাইলে জমির খতিয়ান দেখে নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ‘ ই পর্চা- অনলাইনে জমির খতিয়ান’ ইনফোটি দেখুন।

অনলাইনে খতিয়ান বের করার নিয়ম

১। প্রথমে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে https://www.eporcha.gov.bd/khatian  ক্লিক করুন।

২. একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন সেখানে আপনার নিজস্ব বিভাগ, নিজস্ব জেলা, নিজস্ব উপজেলা এবং পরিশেষে মৌজা বাছাই করুন। ( এসবের পূর্বে কিন্তু জমির ধরন অনুযায়ী বিএস,সিএস,বিআরএস, পেটি,এসএ,দিয়ারা এর মধ্যে যা হবে তা সিলেক্ট করুন)। এইসব সম্পর্কে পরবর্তীতে কোনো আর্টিকেলে বলার চেষ্টা করবো।

৩. এরপর আপনারা জমির খতিয়ান বের করার চারটি অপশন দিখতে পারবেন

(ক) খতিয়ান নং অনুযায়ী

(খ) দাগ নং অনুযায়ী

(গ) মালিকানা নাম অনুযায়ী

(ঘ) পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button